Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশে ধান ও চালের পুষ্টি নিরাপত্তা ও নিরাপদতা

বাংলাদেশে ধান ও চালের পুষ্টি নিরাপত্তা ও নিরাপদতা
প্রফেসর ড. মো: আব্দুল আলীম
বাংলাদেশে সিরিয়াল জাতীয় শস্যের উৎপাদন অনেক গুণ বেড়েছে বিশেষ করে ধান উৎপাদন। ১৯৭১ সালে ধানের উৎপাদন ছিল ১০৯ লক্ষ মেট্রিক টন, যা বেড়ে হয়েছে ২০২১ সালে ৫৬৪.১৫ লক্ষ মেট্রিক টন (উঅঊ এর রিপোর্ট অনুসারে)। বর্তমানে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। বাংলাদেশে মোট ৮৫০০ জাতের ধান যা জার্মপ্লাজমে সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ১০৭টি জাতের ধান, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২৫টি জাতের ধান এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৩টি জাতের ধান অবমুক্ত করেছে। ইহা ছাড়াও বাংলাদেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।
রাইস কার্নেল কম্পোজিশন
রাইস কার্নেলে ২০% হাস্ক বা হাল থাকে। ৮-১২% থাকে রাইস ব্রান এবং ৬৮-৭২% থাকে হোয়াইট রাইস বা মিলড রাইস। রাইস কার্নেলের বাইরের অংশকে হাস্ক বা হাল বলে। তারপর রাইস ব্রান থাকে। রাইস ব্রানের ৩টি অংশ থাকে। বাইরের অংশকে পেরিকার্প, মাঝের অংশকে সিডকোট এবং ভেতরের অংশকে নিউসেলার টিস্যু বলে। রাইস ব্রানের পরেই রয়েছে এন্ডোস্পার্ম। এন্ডোস্পার্ম এর রয়েছে দুটি অংশ এলিউরোন সেললেয়ার এবং স্টার্চ গ্যানিউলস। আরো রয়েছে জার্ম/এমব্রায়ও। রাইস কার্নেলের কেন্দ্র থেকে বাইরের অংশে অর্থাৎ হাস্কের পরেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পুষ্টি থাকে যেমন প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলস। রাইস কার্নেলের ভেতরে শুধু থাকে স্টার্চ। অতিরিক্ত পলিশিং এর ফলে তাই চালের পুষ্টি উপাদান কমতে থাকে।
চাল উৎপাদন
রাইস কার্নেলের কম্পোজিশন অনুসারে মিলড রাইস পাওয়ার কথা ১০০ কেজি ধানের জাতভেদে  ৬৮-৭২ কেজি চাল বা ৪০ কেজি ধানে ২৮ কেজি চাল। সেই হিসাবে আমাদের দেশে চাল উৎপাদন হওয়ার কথা ৩৭.৬১ মিলিয়ন মেট্রিক টন। কিন্তু অতিরিক্ত পলিশিং এর কারণে আমাদের দেশে ৪০ কেজি ধান থেকে ২৩ কেজি চাল উৎপাদিত হচ্ছে। সেই হিসাবে মোট চালের উৎপাদন দাঁড়ায় ৩২.৪৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন। অর্থাৎ মোট লস হচ্ছে ৫.১৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন যা পশু খাদ্য বা মাছের খাদ্যরূপে অন্যত্র ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পশুখাদ্য রপ্তানি হচ্ছে। আমরা যদি এই পশু খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করতে পারি এবং পলিশিং কমিয়ে অর্ধেকে আনতে পারি তাহলেও আমাদের চালের উৎপাদন অনেকটাই বৃদ্ধি করতে পারি।
বাজারজাতকৃত চালের সর্বাধিক ব্র্যান্ড
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও পরিধান ইউনিট (এফপিএমইউ) বাংলাদেশে সর্বাধিক ধান উৎপন্ন হয় এমন ১৮টি জেলাতে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। সমীক্ষাধীন ১৮টি জেলার প্রায় সকল জেলায় বাজারজাতকৃত চালের সর্বাধিক ব্র্যান্ড হিসাবে ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯, মিনিকেট, নাজিরশাইল, স্বর্ণা নামে চাল বাজারজাত করা হচ্ছে। বিআর২৮ কে ২৮নং হাসকি, ২৮ স্পেশাল, ২৮নং মিনিকেট, লিচু ২৮, থ্রিস্টার ২৮, হামিদ ২৮ নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। ব্রি ধান২৯  কে  ২৯ স্পেশাল, ২৯নং মিনিকেট, লিচু ২৯, থ্রিস্টার ২৯, হামিদ ২৯ নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। মিনিকেট চালকেও স্থান এবং চালকল ভেদে বিভিন্ন নাম দিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে যেমন  জেড মিনিকেট, মিনার  মিনিকেট, গরুর গাড়ি মিনিকেট, ২৮ মিনিকেট, জোড়া কবুতর মিনিকেট, হরিণ মিনিকেট, হ্যান্ডশেক মিনিকেট, দেশ বন্ধু মিনিকেট, টাইগার মিনিকেট, আনারস মিনিকেট, তারা মিনিকেট ইত্যাদি বহু ধরনের নাম দিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চালকে নাজির, কাটারি নাজির, হাসকি নাজির, নাজিরশাইল নামে বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধীদপ্তরের প্রতিনিধি এবং জেলা বিপণন কর্মকর্তাদের প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক সমীক্ষাধীন জেলাসমূহে মিনিকেট নামে কোন ধানের আবাদ নেই। দেশের উত্তরাঞ্চলে জিরাশাইল নামে এক ধরনের ধান থেকেই বেশিরভাগ মিনিকেট নামে চাল উৎপন্ন হচ্ছে। এছাড়া, ব্রি ধান৫২, সুবললতা, জিরা নামক ধান থেকেও এ চাল উৎপাদিত হচ্ছে। কারো কারো মতে যে কোন প্রকারের চিকন/সরু ধানের দুই সিদ্ধ চালকে মিনিকেট চাল নামে রূপান্তর করা হচ্ছে। রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা অঞ্চলের কৃষকদের প্রদত্ত তথ্য মোতাবেক কোন কোন এলাকায় এক ধরনের উৎপাদিত চিকন জাতের ধানকে স্থানীয়ভাবে মিনিকেট নাম দেয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁও এবং দিনাজপুর অঞ্চলের কতিপয় কৃষক মিনিকেট নামক ধানের আবাদ হয় বলে জানালেও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বিপণন কর্মকর্তার প্রতিনিধি জানান যে, মিনিকেট নামে কোন ধানের আবাদ নাই। অন্যদিকে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া এবং যশোর অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক ঐ সব জেলার কোন কোন কৃষক ভারতীয় জাতের তথাকথিত মিনিকেট ধানের আবাদ করে থাকে। ঐসব ধান থেকেও উৎপন্ন চালকে মিনিকেট নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। সমীক্ষার প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক নাজিরশাইল চালও তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের ধান থেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কাটারি, সম্পাকাটারি ব্রি ধান২৮, ব্রিধান২৯, নাজিরশাইল ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে উল্লেখিত জেলাসমূহে নাজিরশাইল বা নাজির নামক ধানের উৎপাদন হয় এমন কোন জোরাল তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পলিশডকৃত চালের সর্বোচ্চ পুষ্টিমান
বাংলাদেশ অটো রাইস মিলগুলোতে প্রক্রিয়াকৃত বা পলিশড চালে বর্তমানে পুষ্টিমান কতটুকু রয়েছে, চালের পুষ্টিগুণ অক্ষুণœ রাখার লক্ষ্যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কি কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে এবং কি উপায়ে চাল প্রক্রিয়াজাত করলে চালের সর্বোচ্চ পুষ্টিমান বজায় থাকতে পারে সে বিষয়ে যাচাই ও সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়। কমিটি কর্তৃক চালের পলিশিং নিয়ে গবেষণা প্রক্রিয়া বিষয়ে আলোচনা করেন এবং ব্রাউন রাইস, ৫% পলিশড ও ১০% পলিশড (ব্রি ধান২৮) পারবয়েলড ও আন-পারবয়েলড অবস্থায় প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেড, ভিটামিন ই১, ভিটামিন ই২, ভিটামিন ই৩, ভিটামিন ই৬ এবং ভিটামিন ই৯ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর থেকে এবং ফেরাস, ম্যাংগানিজ, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যানেসিয়াম এবং ফসফরাস বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিশ্লে­ষণ করা হয়। বিশ্লেষণের তথ্য সারণি-১ ও সারণি-২ দ্রষ্টব্য।
বিশ্লেষণের তথ্য অনুযায়ী প্রতীয়মাণ হয় যে ব্রাউন রাইস থেকে পলিশিং যত বাড়বে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ইত্যাদি তত দ্রুত গতিতে কমতে থাকবে। শুধু মাত্র কার্বোহাইড্রেট বাড়তে থাকবে।
বাংলাদেশ অটোরাইস মিলগুলোতে অতিরিক্ত পলিশিং এর ফলে বিভিন্ন অনুপুষ্টির পরিমাণের একটি বড় অংশ হ্রাস পায়। বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী সাধারণত অনুপুষ্টির ঘাটতিতে ভোগে, বিশেষত জিংক এবং আয়রন এর ঘাটতি এ দেশে ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। এ জনগোষ্ঠী নিজেদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভাতের উপর নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে চালের পলিশিং কমিয়ে আনা গেলে অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৮% এ নিয়ে আসা হলে এ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা অনেকাংশে সম্ভব হবে। এ ছাড়াও আরো উল্লেখ্য যে, অতিরিক্ত পলিশিং এর ফলে চালের মোট উৎপাদন কমে যায়। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে কমিটি নিম্নোক্ত সুপারিশমালা প্রদান করেন।  
১। পলিশডকৃত চালের সর্বোচ্চ পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য করণীয় : (ক) ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের জন্য মোড়কের গায়ে চালের জাতের নাম উল্লেখ করতে হবে। এক বা একাধিক জাতের চাল মিশ্রিত থাকলে মোড়কের গায়ে “মিশ্রিত চাল” কথাটি উল্লেখ করতে হবে। (খ) যে কোনো জাতের চাল শুধুমাত্র পূর্ণসিদ্ধ অথবা আতপ অবস্থা ব্যতীত বাজারজাত করা যাবে না। কেননা, কোনো কোনো চালের ক্ষেত্রে তা আধাসিদ্ধ অবস্থায় বাজারজাত করা হয়। আধাসিদ্ধ চাল দ্রুত নষ্ট হয় বলে তা বেশিদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। (গ) যে কোনো চালের পলিশিং কোনভাবেই তা ৮% এর অধিক করা যাবে না। (ঘ) চালে পানির পরিমাণ সর্বোচ্চ ১১% রাখতে হবে। (ঙ) স্বীকৃত ধানের জাত ব্যতীত অন্য কোনো নামে চাল বাজারজাত করা যাবে না (যেমন: মিনিকেট, নাজিরশাইল)।
(২) চালের পলিশিং বিষয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ : (ক) গবেষণালব্ধ ফলাফল অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৮% পলিশিং করা যাবে তা আইন/বিধি-প্রবিধি বা নীতিমালা দ্বারা নির্ধারণ করে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। (খ) অতিরিক্ত পলিশড চালের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে।
(গ) অতিরিক্ত ছাঁটাইকৃত চাল স্বাস্থ্যসম্মত নয় এ বিষয়ে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করা যেতে পারে। (ঘ) এছাড়াও চালের traceability নিশ্চিত করার জন্য মিলার কর্তৃক চাল ক্রয়ের সময় কি জাতের ধান কেনা হলো তা উল্লেখপূর্বক একটি রেজিস্টার মেইনটেইন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।
(৩) চালের পলিশিং বিষয়ে আইন/বিধি প্রণয়নের পর মনিটরিং কার্যক্রম গ্রহণ :
(ক) চালে সর্বোচ্চ ৮% পলিশিং প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা সেটা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মনিটরিং করার লক্ষ্যে চালের আকার-আকৃতি এবং ১০০০ চালের কার্নেলের ওজন পরিমাপ করে একই জাতের ধানের গড় কার্নেলের ওজনের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। (খ) DNA- based অথবা non DNA-based পদ্ধতির মাধ্যমে ধানের জাত চিহ্নিতকরণ করা যেতে পারে।DNA-based পদ্ধতিতে মলিকুলার মার্কারের মাধ্যমে জাত শনাক্ত করা যেতে পারে। আবার চালের physico-chemical analysis করেও জাত শনাক্ত করা যেতে পারে। (গ) যেসব প্রতিষ্ঠান ৮% এর নিম্নে পলিশ করে চাল বাজারজাত করবে তাদের প্রণোদনা/স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে।

লেখক : সদস্য, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, খাদ্য মন্ত্রনালয়, মোবাইল : ০১৭৩২২৫২২২৯, ই-মেইল :  maalim07@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon